মো. রাশিদুল ইসলাম, গুরুদাসপুর (নাটোর) সংবাদদাতা
ঘন কুয়াশা। হিমশীতল বাতাশ। বাড়াচ্ছে শীতের তীব্রতা। প্রকৃতির এমন প্রতিকূল আবহাওয়া জেঁকে বসেছে গবাদি পশুগুলোর ওপর। প্রতিনিয়তই নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে হাঁস, মুরগি, গরু-ছাগলসহ গবাদিপশু। মাঠ পর্যায়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম না থাকায় ছাগলে প্লেগরোগ (পিপিআর), হাঁস-মুরগি রানী ক্ষেত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে গরুগুলো ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ক্ষুরা রোগ, চর্ম রোগসহ শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে করে গবাদি পশু নিয়ে ঝুঁকিতে পড়েছেন খামারিসহ কৃষকরা।
গুরুদাসপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা ইত্তেফাককে বলেন, প্রচণ্ড শীতে গবাদিপশু ও পক্ষিকুল প্রাণীগুলো ঝিমিয়ে পড়েছে। শীতের কারণে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। এতে ঝুঁকির কিছু নেই। খামারিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, গুরুদাসপুর উপজেলায় প্রায় সাতশ গরু-ছাগলের খামার রয়েছে। এসব খামারে দেশি-বিদেশি প্রায় ৯১ হাজার গরু এবং দুই লাখ ২০ হাজার ছাগল পালন হচ্ছে। এছাড়া হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে ১৫০টি। এসব খামারে দুই লাখ ৩৬ হাজার হাঁস-মুরগি পালন করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে গতকাল মঙ্গলবার গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভুক্তভোগীরা তাদের গবাদিপশুগুলোর চিকিত্সার জন্য এনেছেন। তাদেরই একজন গুরুদাসপুর পৌরসভার আনন্দনগর গ্রামের কৃষক মকবুল শাহ। তার চারটি গরুই শীতে ঝিমিয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে তিনি ডায়রিয়া আক্রান্ত একটি বাছুর গরু নিয়ে এসেছেন প্রাণিসম্পদ বিভাগে। রোগাক্রান্ত পশু নিয়ে শুধু তিনিই এসেছেন তা নয়। তারমত অসংখ্য কৃষক এবং খামারি প্রতিদিন গবাদিপশু নিয়ে ভিড় করছেন। হাসপাতালের তথ্যমতে, প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ জন ভুক্তভোগী মানুষ তাদের পশুর চিকিত্সা নিতে আসছেন।
উপজেলার চাঁচকৈড় পুরানপাড়া, বিলশা, খুবজিপুর, গাড়িষাপাড়া, বামনকোলা ও দড়িবামনগাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই খামারিরা গরুগুলো গোয়ালঘরে বেঁধে রেখেছেন। প্রচণ্ড শীতে এসব পশুগুলো শুকিয়ে গেছে। শীতের কবল থেকে রক্ষা করতে পশুগুলোকে চটের বস্তা জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গোয়ালঘরগুলোর অধিকাংশই খোলা (বেড়াহীন)। উত্তরের হিমশীতল বাতাসে পশুগুলো কাঁপছে। তার চেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছে গৃহপালিত ছাগলগুলো। হাতে গোনা কিছু মানুষ তাদের ছাগলকে পুরাতন কাপড় পরিয়ে রক্ষার চেষ্টা করলেও অধিকাংশ ছাগলকেই যত্ন নিতে পারছে না। এসব কারণে পশুগুলো শীতকালীন নানা সমস্যায় ভুগছে।
এদিকে উপজেলার অন্তত ৮২টি খামার মালিক শীতে তাদের মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। চাঁচকৈড় তালুকদার পাড়া মহল্লার মুরগির খামার মালিক আব্দুল কাদের ইত্তেফাককে জানান, শীতে তার খামারের প্রায় দেড় হাজার মুরগি ঝিমিয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশা আর শীত থেকে মুরগিকে বাঁচাতে খামারের চারদিকে ঘিরে রাখার পাশাপাশি ভেতরে গরম রাখতে বিদ্যুতের বাল্ব জ্বালিয়ে দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারপরও মরছে মুরগি।
তাছাড়া বিভিন্ন গাছে আশ্রয় নেওয়া বাদুর, কাক, শালিক, বকসহ পক্ষিকুল প্রাণীগুলোও শীতে ঝিমিয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় পাখিগুলোর কিচিরমিচির শব্দ আর শুনতে পাচ্ছে না মানুষ। সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, গত বুধবার সকালে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৫০টি পাখিকে অচেতন অবস্থায় বাঁশ ঝাড়ের নিচে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। পাখিগুলোর দুর্দশা দেখলে কষ্ট হয়।
0 comments: