জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পদত্যাগ দাবিতে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
তালাবদ্ধ ছিল দুটি প্রশাসনিক ভবন ও অনুষদ ভবনগুলোর ফটক। উপাচার্যসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে প্রবেশ করেনি। অনুষ্ঠিত হয়নি ক্লাস-পরীক্ষা।বুধবার সকাল থেকে এ কর্মসূচির ফলে কার্যত অচল ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।
অপরদিকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে এ আন্দোলনকে ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করেছেন উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা।
এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর উপাচার্যকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের জন্য ১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা। এ সময়ের মধ্যে উপাচার্য পদত্যাগ না করায় বুধবার ও বৃহস্পতিবার সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করবেন তারা।
তবে বেঁধে দেয়া সময়ের শেষ দিন মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্য পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়ে দেন। একই সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ‘অযৌক্তিক’ বলেও দাবি করেছেন উপাচার্য।
জানা গেছে, বুধবার সকাল ৭টা থেকে আন্দোলনকারীরা দুটি প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। সকালে ক্যাম্পাস থেকে ঢাকা অভিমুখের পরিবহনগুলো আটকে দেন তারা। তবে ঢাকা থেকে শিক্ষকদের বহনকারী কয়েকটি গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
এছাড়া সোয়া ১টায় ঢাকা অভিমুখে শিক্ষক বহনকারী বাসগুলো ছাড়তেও বাঁধা দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
বিকাল ৪টা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা ভবনগুলোতে অবস্থান করেছে। এছাড়া দুপুর দেড়টার দিকে সর্বাত্মক ধর্মঘটের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তারা।
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’র সংগঠক শাখা ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ দিদার বলেন, ‘আমরা উপাচার্যকে ১ অক্টোবরের মধ্যে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের সুযোগ দিয়েছিলাম। তিনি পদত্যাগ করেননি। তাই আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে পদত্যাগে ব্যাধ্য করা হবে। আজকের মতো বৃহস্পতিবারও সর্বাত্মক ধর্মঘট চলবে।’
এরপর আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে ষড়যন্ত্রমূলক বলে আখ্যা দিয়েছেন উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা। বুধবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’ ব্যানারে মানববন্ধন করেন তারা।
মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার বলেন, ‘আন্দোলন আর চক্রান্ত দুইটা আলাদা জিনিস। আন্দোলন হলে আলোচনাও হবে। আলোচনায় সমাধান হবে। কিন্তু আলোচনায় না গিয়ে আন্দোলন করলে তাকে চক্রান্তই বলা যায়।’
‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’র সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে ‘তদন্ত কমিটি’র জন্য উপাচার্য আলোচনায় বসলেও তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেছে। এতেই প্রমাণিত হয় এই আন্দোলনের পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। তবে ষড়যন্ত্রমূলক অযৌক্তিক কোনো আন্দোলনের কাছে আমরা মাথা নত করব না।’
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাঁধাগ্রস্ত করতে একটি মহল অযৌক্তিক আন্দোলন করছে।’
আন্দোলনকারীরা অচিরেই তাদের ভুল বুঝতে পেরে আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মানববন্ধনে উপাচার্যপন্থী শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীরা সর্বাত্মক ধর্মঘট আর উপাচার্যপন্থীরা আন্দোলনের বিপক্ষে দিনব্যাপী গণসংযোগ চালাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।