সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়ায় গ্রামের বাড়িতে ছুটি কাটছে মোস্তাফিজের। অথচ গত তিন বছর এ সময় তাঁকে এভাবে ছুটি কাটাতে দেখা যায়নি। প্রতিবারই ব্যস্ত ছিলেন আইপিএল নিয়ে। টানা তিন মৌসুম খেলার পর এবার ‘দর্শক’ হয়ে আইপিএল দেখতে কেমন লাগছে মোস্তাফিজের?
মুম্বাই ইন্ডিয়ানস-রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ম্যাচ চলছে। কী একটা কাজে ব্যস্ত ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। ব্যস্ততা শেষে যখন ফিরেছেন, দেখলেন বাড়ির অনেকে টিভিতে ম্যাচটা দেখছেন। দরজা থেকে একটু উঁকি দিলেন টিভির দিকে। আগে ব্যাট করা মুম্বাইয়ের স্কোর তখন ৭ উইকেটে ১৭২। অতটুকু দেখেই মোস্তাফিজ চলে এলেন নিজের ঘরে। মুম্বাই কেমন খেলছে, কী করছে—এসব নিয়ে তাঁর ভাবতে যেন বয়েই গেছে!
২০১৬ আইপিএল যখন খেলতে গেলেন, কী মাতামাতিটাই না হলো তাঁকে নিয়ে! হবে না কেন? প্রথম বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে পেলেন ‘আইপিএলের সেরা উদীয়মান’ খেলোয়াড়ের পুরস্কার। ১৬ ম্যাচে ১৭ উইকেট। ইকোনমি রেট ৬.৯০, সেটিও স্লগ ওভারে বোলিংয়ের চাপ সামলে। বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে ২০১৬ আইপিএল যেন হয়ে উঠছিল মোস্তাফিজের ৪ ওভার। পরের আইপিএলে তাঁকে ধরে রেখেছিল হায়দরাবাদ ফ্র্যাঞ্চাইজি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ততা আর টিম ম্যানেজমেন্টের উপেক্ষায় মোস্তাফিজ সেবার একটির বেশি ম্যাচ খেলতে পারেননি।
গত আইপিএলে খেললেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে। নিজেদের প্রথম ছয় ম্যাচেই সুযোগ পেলেন। পরের আট ম্যাচের মাত্র একটিতে জায়গা মিলল একাদশে। আইপিএল থেকে ফিরলেন পায়ের চোট নিয়ে। যে চোট তাঁকে খেলতে দেয়নি গত জুনে দেরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। আর এবার আইপিএলের নিলামেই ওঠেনি তাঁর নাম। বিসিবি তাঁর নামটি পাঠায়নি, নাকি নিজেই দেননি, সেটি নিয়ে আছে ধোঁয়াশা।
কিন্তু এটা ঠিক, তিন বছর পর এবার একটু ব্যতিক্রম অভিজ্ঞতা হচ্ছে মোস্তাফিজের। টানা তিন মৌসুম খেলার পর ‘দর্শক’ হয়ে তাঁকে দেখতে হচ্ছে আইপিএল। তিনি আদৌ দর্শক কি না, সেটি নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন আছে। মোস্তাফিজ নিজেই যেমন বললেন, ‘আইপিএল খুব একটা দেখা হয় না। এমনিতেই আমি খেলা দেখি কম। নিজের খেলাই দেখি না (রিপ্লে বা ভিডিও) আর আইপিএল!’
ক্রিকেট অবশ্যই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। তবে ক্রিকেটের বাইরের জীবনটা মোস্তাফিজের ভীষণ সাদামাটা। সে জীবনে ক্রিকেটকে রাখতে চান একটু দূরে। সারাক্ষণ ক্রিকেট নিয়েই পড়ে থাকতে হবে, এটা মনে করেন না। ক্রিকেট নিয়ে যতটুকু ভাবা দরকার, ততটুকুই ভাবতে চান। সেটির চেয়েও কমও হবে না, বেশিও হবে না—এই হচ্ছে ক্রিকেটার মোস্তাফিজের দর্শন। টানা তিন বছর পর আইপিএল থেকে দূরে আছেন, এটা নিয়েও তাঁর কোনো ভাবনা নেই। মোস্তাফিজের কথা হচ্ছে, ‘যখন যেটা খেলব, তখন সেটা নিয়ে ভাবব। না খেললে সেটি নিয়ে এত ভাবার কী আছে!’
তিনি উচ্চাকাঙ্ক্ষী নন। আকাশকুসুম চিন্তা করেন না। অবশ্যই স্বপ্ন দেখেন। এখন মোস্তাফিজের স্বপ্ন যেমন বিশ্বকাপ ঘিরে। স্বপ্ন দেখেন, নিজের প্রথম বিশ্বকাপটা রাঙাবেন। সেই লক্ষ্যে কাজও করে যাচ্ছেন। যদিও নিউজিল্যান্ড সফর থেকে ফিরে পেয়েছেন লম্বা ছুটি। এ বিরতি শেষ হওয়ার কথা আগামী ৬ এপ্রিল। সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় ফিরবেন তখনই। বিরতি তিনি কাজে লাগাচ্ছেন অন্যভাবে।
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ থানার যে গ্রামে বেড়ে উঠেছেন, যে মাঠে তাঁর হাতেখড়ি, নিজ উদ্যোগে সেখানে নিয়মিত ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন করছেন। নিজেই উইকেট বানিয়ে নিয়েছেন। আগে বাড়ি এলে একটু-আধটু রানিংয়ের বাইরে কিছু করতেন না। এখন তাঁর উপলব্ধি ভিন্ন, ‘ছুটিতেও বোলিং-ব্যাটিং অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছি। আগে বাড়ি এলে কিচ্ছু হতো না। হালকা রানিং করতাম। এখন সবই করি।’
বাড়িতে ছুটি কাটাতে এসে বসে থাকা যাবে না—এটি পরিণত মোস্তাফিজের উদাহরণ। ব্যক্তিজীবনে আরও বেশি পরিণত। কদিন আগে বিয়ে করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামিয়া পারভীনকে। দুজনের অবশ্য এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দাম্পত্য জীবন শুরু হয়নি। বিয়ের দু-তিন দিন পরই ঢাকায় চলে এসেছেন নববধূ। ক্লাস মিস হচ্ছে, উপস্থিতির হার কমে গেলে পরীক্ষা দিতে সমস্যা হতে পারে বলে মোস্তাফিজ নিজেই স্ত্রীকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। সামিয়ার পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটুক, কিছুতেই তিনি চান না। জীবনটা সাজিয়ে নিতে দুজনের সামনে পড়ে রয়েছে দীর্ঘ পথ। সেই পথ পাড়ি দিতে এখনই ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ানোর মানে খুঁজে পান না মোস্তাফিজ।
SHARE THIS
0 comments: