মো.রাশিদুল ইসলাম, গুরুদাসপুর (নাটোর)
স্মৃতিচিহ্ন মুছে গেছে প্রায় সবগুলো কবরের। একটি মাত্র স্মৃতিসৌধ, জীর্ণশীর্ণ হয়ে দাঁড়িয়ে। সেটিও নির্মিত হয়েছিল শহীদ পরিবারের উদ্যোগেই। ১৯৭১ এ নিহত ১৬ শহীদের গণকবরগুলো সরকারিভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শহীদদের মেলেনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। এখন অযত্নে, অবহেলায় ১৬ শহীদের গণকবরগুলোর স্মৃতিচিহ্ন মুছে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আর শহীদ পরিবারের সদস্যদের দিন কাটছে দুঃখ দুর্দশায়।
‘১৭ এপ্রিল ১৯৭১। দুপুর ১২টা হবে। এক সথে ১৬ জন যুবককে লাইনে দাঁড় করানো হয়। বাঁধা হয় তাদের চোখ ও হাত। এরপর চলে পাক-হানাদার বাহিনীর গুলি। ঘটনাস্থলেই নিহত হন ঐ ১৬ জওয়ান। ঘটনার পর নিহতদের বাড়িঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়’-প্রত্যক্ষদর্শী সুনীল কুমার গুহ জানাচ্ছিলেন সেদিনের নির্মমতার এই গল্প।
নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর সদরের উত্তর নাড়ীবাড়ি এলাকায় পাক-হানাদার বাহিনীর চালানো তাণ্ডবে নিহত হওয়া ঐ ১৬ যুবকের কেউ পায়নি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। সংরক্ষণ করা হয়নি এসব শহীদদের গণকবরগুলো। সেদিনের শহীদ হওয়া দিলীপ কুমার সরকারের বাবা সুধীরচন্দ্র সরকার নিজ খরচে শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন। ঐ শহীদ মিনার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
জানা গেছে, পাকসেনারা চোখ ও হাত বেঁধে লাইনে গুলি করে শীতানাথ হালদার, বলরাম হালদার, নীল রতন সরকার, নবরাম মজুমদার, ডা. মনিন্দ্র নাথ সরকার, দিলীপ কুমার সরকার, সুরেশ চন্দ্র মালাকার, মানিকচন্দ্র মালাকার, বিষ্টপদ ঘোষ, সুধীর চন্দ্র হালদার, সুবোধ চন্দ্র হালদার, যদুনাথ কর্মকার, দুখুরাম হালদার, দুলাল মালাকার, গেদু মালাকার ও বাদল চৌধুরীকে হত্যা করে।
শহীদ পরিবারের সদস্যরা জানান, নাড়ীবাড়ি এলাকায় একটি গাছের ছাঁয়ায় বসে আলোচনা করছিলেন তারা। পাকসেনারা নাটোর থেকে গুরুদাসপুরে ঢুকছিল। একসঙ্গে বেশ কিছু মানুষের জটলা দেখে তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পাক-হানাদার বাহিনী। ঘটনাস্থলে ওই ১৬ জন ব্যক্তি নিহত হন। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ ও সুনীল কুমার গুহ।
শহীদ বিষ্ণুপদ ঘোষের স্ত্রী সুনীতি ঘোষ জানান, পাকসেনারা তার স্বামীকে হত্যার পর বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। সে সময় তার ছেলে কৃষ্ণপদ ঘোষ ও বলরাম ঘোষ ছোট ছিল। তাদের মুখে খাবার তুলে দিতে অন্যের বাড়িতে কাজ শুরু করেন সুনীতি। বড় ছেলে কৃষ্ণপদ ঘোষ প্রতিবন্ধী। আর ছোট ছেলে বলরাম ঘোষ সাইকেল মেকার। বয়স বেশি হলেও একমুঠো অন্নের জন্য এখনও ক্ষেত-খামারে ১০০ টাকা রোজে কাজ করছেন ঐ শহীদের স্ত্রী।
গুরুদাসপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ফারুক আহম্মেদ বলেন, নিহতরা গণহত্যার শিকার। তাই মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তাদের নাম নেই।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
0 comments: